একজন নারীর জীবনে মাসিক বা পিরিয়ড একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিষয়টি খুবই সংবেদনশীল, কারণ মাসিক নিয়মিত এবং সঠিকভাবে হওয়ার অর্থ হচ্ছে: সে নারী সন্তান ধারণে পরিপূর্ণভাবে সক্ষম। কিছু যুগ আগেও মাসিক/পিরিয়ড কে অপবিত্র, নাপাক বা অপরিশুদ্ধ বলে মানুষ মনে করতো। তবে এই মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই যুগের সাথে পরিবর্তন হয়েছে।
আগের দিনের নারীরা মাসিক/পিরিয়ড এর দিন বা তারিখ ঘরের ক্যালেন্ডার অথবা আসবাবপত্রে লিখে রাখতো। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে আজ, এই একই কাজ হচ্ছে: Period Tracker Device অথবা Smartphone এর সাহায্যে। বর্তমানে মাসিকের উপর নজরদারি রাখার জন্য রয়েছে বিভিন্ন সব অ্যাপ। এর ভিতর “Period Tracker” অন্যতম।
Period Tracker কি?
এটি একটি মাসিক নজরদারি অ্যাপ। যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী পিল, পিরিয়ড, স্বাস্থ্য, জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং ওজন কমানো সহ, নানা ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারেন। এপসটি বর্তমানে ৬৩ টি দেশের ১৫০ মিলিয়ন লোক ব্যাবহার করে। এছাড়াও এপসটি BBC এবং Privacy International থেকে ভেরিফাইড।
Period Tracker এর সুবিধা/ বৈশিষ্ট্য:
• জনসাধারণের মাঝে বিব্রতকর অবস্থায় না পড়তে, এই অ্যাপে রয়েছে নোটিফিকেশন কাস্টমাইজেশনের ব্যবস্থা। এর ফলে সকল নোটিফিকেশন “Mute” করে রাখতে পারবেন।
• Period, Fertility এবং Ovulation এর সকল রিমাইন্ডার নোটিফিকেশনের মাধ্যেমে দেখার সুবিধা।
• গর্ভনিরোধক খাবার বড়ি খাওয়ার সময়-সীমা নোটিফিকেশনের মাধ্যমে দেখার সুবিধা। এছাড়াও আপনি চাইলে রিং এবং ইনজেকশনের সময়সীমা নির্ধারণ করে রাখতে পারেন। যার ফলে পরবর্তী রিং পরিবর্তন এবং ইনজেকশন দেয়ার জন্য, আপনাকে নোটিফিকেশন আকারে বার্তা জানাবে।
• পিরিয়ড হওয়ার পূর্বাভাস জানার সুবিধা।
• উন্নত পরিবার পরিকল্পনার জন্য, প্রতিদিন গর্ভধারণের প্রতিক্রিয়াগুলো অনুসন্ধান করার সুবিধা।
• দেহের তাপমাত্রার চার্ট অনুযায়ী, Ovulation এর তারিখ নির্ধারণ করার সুবিধা।
• অনিয়মিত মাসিক বা নিয়মিত মাসিকের উপর নজরদারি রাখার সুবিধা।
• গুগল একাউন্টে পিরিয়ডের সমস্ত ডেটা সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধার করার সুবিধা।
• একসাথে একাধিক “পিরিয়ড” অ্যাকাউন্ট ব্যাবহার করার পাশাপশি, এই অ্যাপে রয়েছে আরো অনেক সুবিধা। যেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার পিরিয়ড, স্বাস্থ্য এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ এর দিকে সূক্ষ্ম ভাবে নজরদারী রাখতে পারবেন।
Period Tracker যেভাবে ব্যবহার করবেন:
• প্রথমে Playstore অথবা App Store থেকে “Period Tracker” আপসটি ডাউনলোড করুন।
• এরপর “Period Tracker” আপসটি ওপেন করুন এবং “New User” সিলেক্ট করুন।
• এরপর নতুন একটি ফরম ওপেন হবে এবং আপনার কাছে কিছু প্রশ্ন জানতে চাইবে। যেমন: আপনার পিরিয়ড কত দিন পর পর হয়? কত দিন পর্যন্ত রক্তক্ষরণ থাকে? এবং শেষ পিরিয়ড এর তারিখ। এই সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে “Done” বাটনে ক্লিক করুন এবং এপসটি ব্যাবহার করুন।
রেটিং: আপসটির বর্তমান প্লে স্টোর রেটিং 4.9★ এবং অ্যাপ স্টোরে রয়েছে 4.9★
ডাউনলোড: আপসটি আপনারা ডাউনলোড করতে পারবেন, প্লে স্টোর অথবা অ্যাপ স্টোর থেকে।
মাসিক বা পিরিয়ড সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেয়া হলো:
মাসিক কত দিন হয়?
উত্তর: ৪ থেকে ৭ দিন, কিন্তু মাঝে মাঝে ৮ থেকে ১৩ দিন পর্যন্তও হয়ে থাকে।
মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ?
উত্তর: মাসিক বিভিন্ন কারণে বন্ধ হতে পারে। তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য কারণ গুলো হলো: গর্ভাবস্থা, মানুষিক চাপ, অতিরিক্ত ওজন, PCOS, অতিরিক্ত ব্যায়াম এবং গর্ভনিরোধক বড়ি গ্রহণের ফলে।
মাসিক হলে কি ব্যবহার করতে হয়?
উত্তর: স্যানিটারী প্যাড অথবা পুরনো কাপড়। পুরাতন কাপড় ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই, নির্দিষ্ট কাপড়টি ভালোমতো স্যাভলন, সাবান অথবা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। নাহলে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে।
অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ কি?
উত্তর: অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার টা অস্বাভাবিক কিছু নয়। গর্ভবতী হওয়া ছাড়াও বেশকিছু কারণ রয়েছে, যার কারণে মাসিক বন্ধ থাকে। তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য কারণগুলো হলো: মানুষিক চাপ, অতিরিক্ত ওজন, PCOS এবং অতিরিক্ত ব্যায়াম করার ফলে “মাসিক” বন্ধ হয়ে থাকে।
মাসিক বন্ধ না হলে কি করনীয়?
উত্তর: মাসিক প্রথমত বন্ধ না হওয়ার সব থেকে বড় কারণটি হচ্ছে: হরমোনজনিত সমস্যা। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে মাসিক বন্ধ না হতে পারে। যেমন: জরায়ুতে টিউমার, Fibroid, Thyroid, Endometriosis এবং PCOS. গাইনী কিংবা হরমোনজনিত সমস্যা যে কোন বয়সের নারীদের হতে পারে। এক্ষেত্রে ভয় পাওয়াটা একদম স্বাভাবিক। তবে এরকম কোনো সমস্যা দেখা দিলে, অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
১০ দিনের বেশি মাসিক হওয়ার কারণ?
উত্তর: বর্তমানে অনেক নারীরই দেখা যায় যে, ১০ দিনের বেশি মাসিক হয়ে থাকে। যার ফলে অনেক নারী হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তবে ১০ থেকে ১৩ দিন পর্যন্ত মাসিক হওয়ার ব্যাপারটা একদম স্বাভাবিক।
১০ দিনের বেশি মাসিক হওয়ার, বেশ কয়েকটি কারণ নিচে তুলে ধরা হলো:
• অত্যধিক মাত্রায় ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার ফলে।
• জরায়ুতে টিউমার বা ইনফেকশন এর ফলে।
• ওজন বৃদ্ধি কিংবা কমে যাওয়ার ফলে।
• পর্যাপ্ত পরিমান মানসিক চাপের ফলে। এছাড়াও বেশ কিছু শারীরিক রোগের কারণে, ১০ দিনের বেশি মাসিক হতে পারে। কাজেই যত দ্রুত সম্ভব গাইনী ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
মাসিকের সময় চাকা রক্ত যায় কেন?
উত্তর: PCOS, Endometriosis অথবা Thyroid এর সমস্যা থাকলে এরকমটা হয়ে থাকে।
মাসিক বন্ধ করার দোয়া?
উত্তর: মাসিক বন্ধ করার জন্য নির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই, তবে মাসিক চলাকালীন বিভিন্ন আয়াত, তাহলীল কিংবা জিকির করতে পারেন।
মাসিক বন্ধ করার ট্যাবলেট এর নাম কি?
উত্তর: মাসিক বন্ধ করার জন্য বর্তমানে বাজারে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ। তবে বেশিরভাগ ওষুধই ব্যবহারের ফলে, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মাসিক বন্ধ করার ক্ষেত্রে Remens অথবা Normense খাওয়া যেতে পারে। খাবার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
মাসিকের কত দিন পর নামাজ পড়া যায়?
উত্তর: রক্তক্ষরণ বন্ধ হওয়ার পরপরই গোসল করা “ওয়াজিব” এবং গোসল করার পর যে ওয়াক্ত সামনে আসবে। তা থেকেই নামাজ পড়া যেতে পারে।
ধন্যবাদ সবাইকে